1:19 pm, Sunday, 23 November 2025

রাজধানীতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের শোক: বড়লেখার শিক্ষাঙ্গনে নীরব কান্না

রাজধানীতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের শোক: বড়লেখার শিক্ষাঙ্গনে নীরব কান্না

বড়লেখা, মৌলভীবাজার | ২৩ জুলাই ২০২৫  —

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অসংখ্য কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় সারাদেশের মতো মৌলভীবাজারের বড়লেখায়ও নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বড়লেখা উপজেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে পালন করা হয় রাষ্ট্রীয় শোক। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়, পালিত হয় এক মিনিট নীরবতা, আর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে প্রার্থনা করা হয় নিহতদের জন্য।

শিক্ষাঙ্গনের হৃদয়বিদারক সংহতি

দাসেরবাজার উচ্চবিদ্যালয়, দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চবিদ্যালয়, ইটাউরী হাজী ইউনুছমিয়া মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়, শিশু শিক্ষা একাডেমি ও ইন্টারন্যাশনাল স্কুল—এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একযোগে পালন করেন শোক। তারা বলেন, “শিক্ষার্থী শুধু সংখ্যা নয়, তারা আমাদের সন্তান।”

দাসেরবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস বলেন,

“শিক্ষিকা মাহারিন নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন—শিক্ষকরা কেবল পেশাজীবী নন, তাঁরা হলেন ছায়ার মতো অভিভাবক।”

শিক্ষক মাহারিন: সাহস ও ত্যাগের এক নতুন সংজ্ঞা

বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের কারণে স্কুলের একাংশে আগুন ধরে যায়। এই সময় মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষিকা মাহারীন চৌধুরী নিজের জীবন বিপন্ন করে শিক্ষার্থীদের বের করে দেন নিরাপদ স্থানে। তিনি নিজে আর ফেরেননি।

দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসুক আহমদ বলেন,

“আমরা আজীবন মাহারীন চৌধুরীর ত্যাগকে শ্রদ্ধা করব। তাঁর আত্মত্যাগ আমাদের শিখিয়ে গেল, শিক্ষক মানেই দায়িত্বশীলতা ও ভালোবাসার সর্বোচ্চ রূপ।”

কান্না, প্রার্থনা আর অঙ্গীকার

ইটাউরী হাজী ইউনুছমিয়া মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনাম উদ্দিন বলেন,

“আমি নিজ চোখে এই ঘটনার ভিডিও দেখে অঝোরে কেঁদেছি। এই ট্র্যাজেডি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি জাতীয় হৃদয়ের এক গভীর ক্ষরণ।”

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে একটিই আবেদন—“আর যেন এমন হৃদয়বিদারক মৃত্যু দেখতে না হয়।”

— সালেহ/ তাবাসসুম/ মেহেদী হাসান

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

রাজধানীতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের শোক: বড়লেখার শিক্ষাঙ্গনে নীরব কান্না

Update Time : 06:02:05 pm, Wednesday, 23 July 2025

রাজধানীতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের শোক: বড়লেখার শিক্ষাঙ্গনে নীরব কান্না

বড়লেখা, মৌলভীবাজার | ২৩ জুলাই ২০২৫  —

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে অসংখ্য কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় সারাদেশের মতো মৌলভীবাজারের বড়লেখায়ও নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বড়লেখা উপজেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে পালন করা হয় রাষ্ট্রীয় শোক। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়, পালিত হয় এক মিনিট নীরবতা, আর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে প্রার্থনা করা হয় নিহতদের জন্য।

শিক্ষাঙ্গনের হৃদয়বিদারক সংহতি

দাসেরবাজার উচ্চবিদ্যালয়, দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চবিদ্যালয়, ইটাউরী হাজী ইউনুছমিয়া মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়, শিশু শিক্ষা একাডেমি ও ইন্টারন্যাশনাল স্কুল—এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একযোগে পালন করেন শোক। তারা বলেন, “শিক্ষার্থী শুধু সংখ্যা নয়, তারা আমাদের সন্তান।”

দাসেরবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস বলেন,

“শিক্ষিকা মাহারিন নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন—শিক্ষকরা কেবল পেশাজীবী নন, তাঁরা হলেন ছায়ার মতো অভিভাবক।”

শিক্ষক মাহারিন: সাহস ও ত্যাগের এক নতুন সংজ্ঞা

বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের কারণে স্কুলের একাংশে আগুন ধরে যায়। এই সময় মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষিকা মাহারীন চৌধুরী নিজের জীবন বিপন্ন করে শিক্ষার্থীদের বের করে দেন নিরাপদ স্থানে। তিনি নিজে আর ফেরেননি।

দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসুক আহমদ বলেন,

“আমরা আজীবন মাহারীন চৌধুরীর ত্যাগকে শ্রদ্ধা করব। তাঁর আত্মত্যাগ আমাদের শিখিয়ে গেল, শিক্ষক মানেই দায়িত্বশীলতা ও ভালোবাসার সর্বোচ্চ রূপ।”

কান্না, প্রার্থনা আর অঙ্গীকার

ইটাউরী হাজী ইউনুছমিয়া মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনাম উদ্দিন বলেন,

“আমি নিজ চোখে এই ঘটনার ভিডিও দেখে অঝোরে কেঁদেছি। এই ট্র্যাজেডি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি জাতীয় হৃদয়ের এক গভীর ক্ষরণ।”

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে একটিই আবেদন—“আর যেন এমন হৃদয়বিদারক মৃত্যু দেখতে না হয়।”

— সালেহ/ তাবাসসুম/ মেহেদী হাসান