1:53 pm, Sunday, 23 November 2025

সূরা আল-কাওসার-এর ফজিলত: অফুরন্ত দান, কৃতজ্ঞতা ও জান্নাতের বার্তা

সূরা আল-কাওসার

সূরা আল-কাওসার-এর ফজিলত: অফুরন্ত দান, কৃতজ্ঞতা ও জান্নাতের বার্তা

সূরা আল-কাওসার: পরিচয়

সূরা নাম: আল-কাওসার (সুসমৃদ্ধ অফুরন্ত কল্যাণ)
সূরা নম্বর: ১০৮
নাজিলের স্থান: মক্কা
আয়াত সংখ্যা:
মূল বিষয়বস্তু: রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহর দান, কৃতজ্ঞতা, সালাত ও কোরবানির নির্দেশ

সূরার নাজিলের প্রেক্ষাপট

মক্কার কাফিররা বিশেষত ‘আস ইবনে ওয়ায়েল’ বলেছিলেন, রাসুল (সা.) নিঃসন্তান, তাই তাঁর মৃত্যুর পর কেউ তাঁকে স্মরণ করবে না। এই ব্যঙ্গাত্মক বক্তব্যের জবাবে আল্লাহ তাআলা এই সূরা নাজিল করেন, যাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জান্নাতের বিশেষ দান “কাওসার” প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়।

সূরা কাওসার এর ফজিলত

জান্নাতের বিশেষ নদী কাওসার
— রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:

“কাওসার হলো জান্নাতের একটি নদী, যার পানি দুধের চেয়েও সাদা, সুগন্ধি কস্তুরির মতো।”
📚 (সহিহ মুসলিম)

আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের ঘোষণা
— রাসুল (সা.)-কে তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধেই উঁচু মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

ইবাদতের নির্দেশ
— এই দান পাওয়ার পর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন:

“তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো।”

শত্রুদের অপমান
— যারা রাসুল (সা.)-কে অবজ্ঞা করেছিল, তাদেরকেই “আবতার” (নিঃসন্তান, মর্যাদাহীন) বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

সূরা আল-কাওসার (আরবি, উচ্চারণ ও বাংলা অনুবাদ)

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
١. إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
٢. فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
٣. إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ

 উচ্চারণ (বাংলা হরফে):

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
১. ইন্না আ’তাইনাকা আল-কাওসার
২. ফা-সল্লি লি-রাব্বিকা ওয়ানহার
৩. ইন্না শানিইয়াকা হুয়াল আবতার

 অর্থ:

“নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দান করেছি কাওসার।
অতএব, তুমি তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো।
নিশ্চয়ই তোমার বিদ্বেষীই হলো নিঃসন্তান (মর্যাদাহীন)।”

 শিক্ষণীয় বিষয়:

* আল্লাহর দান নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকা
* ইবাদত ও কোরবানির মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
* নবীজি (সা.)-এর মর্যাদার স্বীকৃতি
* যারা ইসলাম ও রাসুলকে অপমান করে, তারা বাস্তবে সম্মানহীন

আমলের নির্দেশনা

  • এই সূরাটি ছোট হলেও ঘনঘন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করা যায়

  • সালাত ও কোরবানির গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য এটি নিয়মিত পড়া উচিত

  • ঈদুল আজহা বা কোরবানির সময় এই সূরার বার্তা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক

উপসংহার

সূরা আল-কাওসার পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে ছোট সূরাগুলোর একটি হলেও, এর অর্থ ও বার্তা বিশাল ও গভীর। এই সূরায় রয়েছে:

  • নবীজির মর্যাদার ঘোষণা,

  • জান্নাতের দান কাওসারের সংবাদ,

  • সালাত ও কোরবানির আদেশ,

  • এবং শত্রুদের চির অপমানের বার্তা।

আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন, তাকে অফুরন্ত দান করেন। আর সেই নেয়ামতের শোকর আদায় হয় সালাত ও কোরবানির মাধ্যমে।

লেখক: মাওলানা সাদ আহমদ বর্ণভী, মোহতামিম, মিশকাতুল কোরআন মাদরাসা, মৌলভীবাজার।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

সূরা আল-কাওসার-এর ফজিলত: অফুরন্ত দান, কৃতজ্ঞতা ও জান্নাতের বার্তা

Update Time : 08:41:19 am, Wednesday, 23 July 2025

সূরা আল-কাওসার-এর ফজিলত: অফুরন্ত দান, কৃতজ্ঞতা ও জান্নাতের বার্তা

সূরা আল-কাওসার: পরিচয়

সূরা নাম: আল-কাওসার (সুসমৃদ্ধ অফুরন্ত কল্যাণ)
সূরা নম্বর: ১০৮
নাজিলের স্থান: মক্কা
আয়াত সংখ্যা:
মূল বিষয়বস্তু: রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আল্লাহর দান, কৃতজ্ঞতা, সালাত ও কোরবানির নির্দেশ

সূরার নাজিলের প্রেক্ষাপট

মক্কার কাফিররা বিশেষত ‘আস ইবনে ওয়ায়েল’ বলেছিলেন, রাসুল (সা.) নিঃসন্তান, তাই তাঁর মৃত্যুর পর কেউ তাঁকে স্মরণ করবে না। এই ব্যঙ্গাত্মক বক্তব্যের জবাবে আল্লাহ তাআলা এই সূরা নাজিল করেন, যাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জান্নাতের বিশেষ দান “কাওসার” প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়।

সূরা কাওসার এর ফজিলত

জান্নাতের বিশেষ নদী কাওসার
— রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:

“কাওসার হলো জান্নাতের একটি নদী, যার পানি দুধের চেয়েও সাদা, সুগন্ধি কস্তুরির মতো।”
📚 (সহিহ মুসলিম)

আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের ঘোষণা
— রাসুল (সা.)-কে তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধেই উঁচু মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

ইবাদতের নির্দেশ
— এই দান পাওয়ার পর আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন:

“তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো।”

শত্রুদের অপমান
— যারা রাসুল (সা.)-কে অবজ্ঞা করেছিল, তাদেরকেই “আবতার” (নিঃসন্তান, মর্যাদাহীন) বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

সূরা আল-কাওসার (আরবি, উচ্চারণ ও বাংলা অনুবাদ)

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
١. إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
٢. فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
٣. إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ

 উচ্চারণ (বাংলা হরফে):

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
১. ইন্না আ’তাইনাকা আল-কাওসার
২. ফা-সল্লি লি-রাব্বিকা ওয়ানহার
৩. ইন্না শানিইয়াকা হুয়াল আবতার

 অর্থ:

“নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দান করেছি কাওসার।
অতএব, তুমি তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো।
নিশ্চয়ই তোমার বিদ্বেষীই হলো নিঃসন্তান (মর্যাদাহীন)।”

 শিক্ষণীয় বিষয়:

* আল্লাহর দান নিয়ে কৃতজ্ঞ থাকা
* ইবাদত ও কোরবানির মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
* নবীজি (সা.)-এর মর্যাদার স্বীকৃতি
* যারা ইসলাম ও রাসুলকে অপমান করে, তারা বাস্তবে সম্মানহীন

আমলের নির্দেশনা

  • এই সূরাটি ছোট হলেও ঘনঘন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করা যায়

  • সালাত ও কোরবানির গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য এটি নিয়মিত পড়া উচিত

  • ঈদুল আজহা বা কোরবানির সময় এই সূরার বার্তা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক

উপসংহার

সূরা আল-কাওসার পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে ছোট সূরাগুলোর একটি হলেও, এর অর্থ ও বার্তা বিশাল ও গভীর। এই সূরায় রয়েছে:

  • নবীজির মর্যাদার ঘোষণা,

  • জান্নাতের দান কাওসারের সংবাদ,

  • সালাত ও কোরবানির আদেশ,

  • এবং শত্রুদের চির অপমানের বার্তা।

আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন, তাকে অফুরন্ত দান করেন। আর সেই নেয়ামতের শোকর আদায় হয় সালাত ও কোরবানির মাধ্যমে।

লেখক: মাওলানা সাদ আহমদ বর্ণভী, মোহতামিম, মিশকাতুল কোরআন মাদরাসা, মৌলভীবাজার।