1:18 pm, Sunday, 23 November 2025

সত্যের সাক্ষ্য: সূরা আল-বাকারা ২৫২ নং আয়াতের প্রেক্ষাপট, সানে নুজুল ও শিক্ষা

  • Reporter Name
  • Update Time : 05:38:54 am, Wednesday, 16 July 2025
  • 47 Time View

Verse 252 of Surah Al-Baqarah

আয়াত

ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ ۚ وَإِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ

উচ্চারণ (বাংলায়):
জালিকা মিন আয়া-তিল্লাহি নাতলূহা আলাইকা বিল হাক্কি ওয়া ইন্নাকা লামিনাল মুরসালীন

বাংলা অর্থ:
“এটি আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি, যা আমরা তোমাকে সত্যের সাথে পাঠ করছি এবং তুমি অবশ্যই রাসূলদের একজন।”
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৫২)

সানে নুজুল (নাজিলের প্রেক্ষাপট)

সূরা আল-বাকারা মদিনায় নাজিল হওয়া সবচেয়ে বড় সূরা। হিজরতের পর মদিনায় মুসলিম সমাজ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন, শাসন, যুদ্ধনীতি ও ইহুদি সম্প্রদায়ের ইতিহাসের বিভিন্ন অংশ এখানে বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীর ইবনে কাসীর অনুযায়ী, এই আয়াত তালূত ও যালূতের ঘটনার সাথে সংযুক্ত। (রেফারেন্স: Tafsir Ibn Kathir, ব্যাখ্যা: আল-বাকারা ২৪৬–২৫২)

প্রকৃত ঘটনা

বনী ইসরাইল শত্রুদের হাতে বারবার পরাজিত হচ্ছিল। তারা নবীর কাছে একজন রাজা চেয়েছিল, যিনি তাদের নেতৃত্ব দেবেন। নবী তাঁদের জন্য তালূতকে নেতা নিযুক্ত করেন, যদিও অনেকে তা মেনে নিতে চায়নি।

যুদ্ধের সময় তালূত অল্পসংখ্যক সৈন্য নিয়ে যালূতের বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি হন। এই যুদ্ধে হযরত দাউদ (আঃ), তখনকার এক তরুণ, যালূতকে হত্যা করেন। শত্রু বাহিনী পরাজিত হয় এবং আল্লাহ তাঁকে নবুয়ত ও রাজত্ব দান করেন।

কেন এই আয়াত নাজিল হয়

মক্কার কাফিররা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়ত অস্বীকার করত এবং বলত, তিনি নিজের পক্ষ থেকে গল্প বানিয়ে শোনাচ্ছেন। অথচ আরবরা বনী ইসরাইলের এমন ইতিহাস খুব কমই জানত। এই আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণ হয় — রাসূল (সা.) যা বলছেন তা একান্তই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ওহী।

হাদীসের সমর্থন

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“আমার ও তোমাদের মধ্যে পার্থক্য এই যে, আমার কাছে যা আসে, আমি তা কিছুই গোপন করি না, কিছুই বাড়াই না।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৪৯৮৭)

তাফসীরের প্রমাণ

১. তাফসীর ইবনে কাসীরTafsir al-Qur’an al-Azim
২. তাফসীর আল-কুরতুবিAl-Jami’ li Ahkam al-Qur’an
৩. তাফসীর আত-তাবারীJami’ al-Bayan fi Ta’wil al-Qur’an

মূল শিক্ষা

১. কুরআনের আয়াত সত্য ও নির্ভুল ইতিহাস।
২. রাসূল (সা.)-এর নবুয়ত অটল ও অকাট্য।
৩. আল্লাহর উপর ভরসা করলে দুর্বল বাহিনীও শত্রুকে পরাজিত করতে পারে।
৪. ঐক্য, আনুগত্য ও তাওয়াক্কুল মুসলিম উম্মাহর বিজয়ের মূল শক্তি।

উপসংহার

এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — আল্লাহর বাণী সবসময় সত্য, রাসূল (সা.) সেই সত্যের বাহক, আর তাঁর আনুগত্য ও আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা মানুষকে বিজয়ের শিখরে পৌঁছে দেয়।

রেফারেন্স তালিকা:

  • কুরআন মাজীদ, সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৪৬–২৫২
  • তাফসীর ইবনে কাসীর
  • তাফসীর আল-কুরতুবি
  • তাফসীর আত-তাবারী
  • সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৮৭

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

লেখক : মাওলানা শেখ সাদ আহমদ বর্ণভী, মোহতামিম, মিশকাতুল কোরআন মাদরাসা, মৌলভীবাজার।

সম্পাদনায় : সুমাইয়া/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

সত্যের সাক্ষ্য: সূরা আল-বাকারা ২৫২ নং আয়াতের প্রেক্ষাপট, সানে নুজুল ও শিক্ষা

Update Time : 05:38:54 am, Wednesday, 16 July 2025

আয়াত

ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ ۚ وَإِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ

উচ্চারণ (বাংলায়):
জালিকা মিন আয়া-তিল্লাহি নাতলূহা আলাইকা বিল হাক্কি ওয়া ইন্নাকা লামিনাল মুরসালীন

বাংলা অর্থ:
“এটি আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি, যা আমরা তোমাকে সত্যের সাথে পাঠ করছি এবং তুমি অবশ্যই রাসূলদের একজন।”
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৫২)

সানে নুজুল (নাজিলের প্রেক্ষাপট)

সূরা আল-বাকারা মদিনায় নাজিল হওয়া সবচেয়ে বড় সূরা। হিজরতের পর মদিনায় মুসলিম সমাজ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন, শাসন, যুদ্ধনীতি ও ইহুদি সম্প্রদায়ের ইতিহাসের বিভিন্ন অংশ এখানে বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীর ইবনে কাসীর অনুযায়ী, এই আয়াত তালূত ও যালূতের ঘটনার সাথে সংযুক্ত। (রেফারেন্স: Tafsir Ibn Kathir, ব্যাখ্যা: আল-বাকারা ২৪৬–২৫২)

প্রকৃত ঘটনা

বনী ইসরাইল শত্রুদের হাতে বারবার পরাজিত হচ্ছিল। তারা নবীর কাছে একজন রাজা চেয়েছিল, যিনি তাদের নেতৃত্ব দেবেন। নবী তাঁদের জন্য তালূতকে নেতা নিযুক্ত করেন, যদিও অনেকে তা মেনে নিতে চায়নি।

যুদ্ধের সময় তালূত অল্পসংখ্যক সৈন্য নিয়ে যালূতের বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি হন। এই যুদ্ধে হযরত দাউদ (আঃ), তখনকার এক তরুণ, যালূতকে হত্যা করেন। শত্রু বাহিনী পরাজিত হয় এবং আল্লাহ তাঁকে নবুয়ত ও রাজত্ব দান করেন।

কেন এই আয়াত নাজিল হয়

মক্কার কাফিররা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুয়ত অস্বীকার করত এবং বলত, তিনি নিজের পক্ষ থেকে গল্প বানিয়ে শোনাচ্ছেন। অথচ আরবরা বনী ইসরাইলের এমন ইতিহাস খুব কমই জানত। এই আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণ হয় — রাসূল (সা.) যা বলছেন তা একান্তই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ওহী।

হাদীসের সমর্থন

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“আমার ও তোমাদের মধ্যে পার্থক্য এই যে, আমার কাছে যা আসে, আমি তা কিছুই গোপন করি না, কিছুই বাড়াই না।”
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৪৯৮৭)

তাফসীরের প্রমাণ

১. তাফসীর ইবনে কাসীরTafsir al-Qur’an al-Azim
২. তাফসীর আল-কুরতুবিAl-Jami’ li Ahkam al-Qur’an
৩. তাফসীর আত-তাবারীJami’ al-Bayan fi Ta’wil al-Qur’an

মূল শিক্ষা

১. কুরআনের আয়াত সত্য ও নির্ভুল ইতিহাস।
২. রাসূল (সা.)-এর নবুয়ত অটল ও অকাট্য।
৩. আল্লাহর উপর ভরসা করলে দুর্বল বাহিনীও শত্রুকে পরাজিত করতে পারে।
৪. ঐক্য, আনুগত্য ও তাওয়াক্কুল মুসলিম উম্মাহর বিজয়ের মূল শক্তি।

উপসংহার

এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় — আল্লাহর বাণী সবসময় সত্য, রাসূল (সা.) সেই সত্যের বাহক, আর তাঁর আনুগত্য ও আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা মানুষকে বিজয়ের শিখরে পৌঁছে দেয়।

রেফারেন্স তালিকা:

  • কুরআন মাজীদ, সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৪৬–২৫২
  • তাফসীর ইবনে কাসীর
  • তাফসীর আল-কুরতুবি
  • তাফসীর আত-তাবারী
  • সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৮৭

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

লেখক : মাওলানা শেখ সাদ আহমদ বর্ণভী, মোহতামিম, মিশকাতুল কোরআন মাদরাসা, মৌলভীবাজার।

সম্পাদনায় : সুমাইয়া/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল