সিরাজগঞ্জের সোনামুখীতে তরিকাপন্থি অনুসারীদের ‘রহস্যময়’ দাফন
সিরাজগঞ্জ | ১৫ জুলাই ২০২৫ —
একই মৃতদেহ, দুই দাফন— এমন বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী গ্রামে। মৃত্যুর তিন দিন পর কবর থেকে মরদেহ তুলে এনে বাড়ির উঠানে পুনরায় দাফন, আর তাতেই হতবাক পুরো গ্রাম।
সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল, হঠাৎ গল্পের মোড়
গত ৯ জুলাই বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান আব্দুস সাত্তার (৬৫)। স্থানীয় জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে ধর্মীয় রীতি মেনে দাফন হয়, পরদিন কুলখানি ও দোয়া— সবই ছিল ঠিকঠাক।
কিন্তু ১৩ জুলাই, রবিবার গভীর রাতে ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। সকালে দেখা যায়, মৃতের বাড়ির উঠানে খোঁড়া নতুন কবর। কবরস্থানে গিয়ে পরিবারের লোকজন দেখতে পান আগের কবরটি খালি!
‘কবর খালি দেখে অবাক হয়ে যাই’
মৃতের ভাতিজা মজনু রহমান বলেন, “খবর পেয়ে কবরস্থানে যাই। গিয়ে দেখি কবর খালি। বাড়িতে এসে দেখি উঠানে নতুন কবর। কে বা কারা এটা করেছে জানি না।”
গ্রামের নবীর উদ্দিন শেখ জানান, “রাতে কবরস্থানে পাঁচজন পাঞ্জাবি পরা লোককে কবর খুঁড়তে দেখি। ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়, ভয় পেয়ে চলে আসি।”
তরিকাপন্থিদের দাবি, পূরণ হলো শেষ ইচ্ছা
স্থানীয় তরিকাপন্থি অনুসারীরা বলছেন, আব্দুস সাত্তার বেঁচে থাকতে নিজের উঠানে দাফন হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। পরিবারের সিদ্ধান্তে কবরস্থানে দাফন হলেও ভক্তরা সেই ইচ্ছা পূরণে মরদেহ তুলে আনেন বলে ধারণা।
কবরস্থানের তত্ত্বাবধায়ক বেল্লাল হোসেন জানান, “তরিকাপন্থিরা প্রথম থেকেই বাড়ির উঠানে দাফনের কথা বলছিলেন। সম্ভবত তারাই মরদেহ স্থানান্তর করেছেন, তবে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।”
পুলিশ জানে, অভিযোগ নেই
কাজিপুর থানার ওসি নূরে আলম বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ না করায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।”
গ্রামজুড়ে গুঞ্জন, প্রশ্নের উত্তর মেলেনি
এখনো পর্যন্ত কে বা কারা, কীভাবে এমন দুঃসাহসিক কাজ করল— সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে গ্রামের মানুষের কৌতূহল আর গুঞ্জন থামছে না।
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে
মিশকাতুল কোরআন মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা শেখ সাদ আহমদ আমিন বর্ণভী বলেন, ইসলামে মৃতদেহকে একবার দাফন করার পর অপ্রয়োজনে বা পরিবারের অনুমতি ছাড়া সেই দেহ উত্তোলন করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, মৃতদেহের মর্যাদা জীবিত মানুষের সমান, তাই মৃতকে কষ্ট দেওয়া হারাম।
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো বৈধ কারণ ছাড়া কবর স্থানান্তর করা জায়েজ নয়। যদি কোনো বৈধ কারণে (যেমন—স্থানে সমস্যা, বন্যা, ভেঙে যাওয়া) কবর সরানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে তা পরিবারের সম্মতি ও ইসলামী শরীয়া অনুসারে করতে হবে। একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছা থাকলেও পরিবারের সম্মতি ও স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের সাথে পরামর্শ ছাড়া এমন কাজ গ্রহণযোগ্য নয়।
তাই পরিবার যদি না চায়, তাহলে গোপনে মৃতদেহ তুলে অন্যত্র দাফন করা ইসলামসম্মত নয়। যারা করেছেন, তাদের উচিত অনতিবিলম্বে ইসলামী দিকনির্দেশনা মেনে পরিস্থিতি মীমাংসা করা এবং ক্ষমা চাওয়া।
রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com
প্রতিবেদক : মাহমুদুল হাসান
সম্পাদনায় : সুমাইয়া/ তাবাসসুম/ মেহেদী
Reporter Name 




























