1:19 pm, Sunday, 23 November 2025

সূরা আন-নাস তেলাওয়াতের ফজিলত

  • Reporter Name
  • Update Time : 01:15:22 pm, Sunday, 13 July 2025
  • 29 Time View

🌙সুরা নাস (سورة الناس)

সুরা নাসের উচ্চারণ ও অর্থ

আরবি :

قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ النَّاسِ ۙ﴿۱﴾ مَلِکِ النَّاسِ ۙ﴿۲﴾﴾اِلٰهِ النَّاسِ ۙ﴿۳﴾مِنۡ شَرِّ الۡوَسۡوَاسِ ۬ۙ الۡخَنَّاسِ ۪ۙ﴿۴﴾الَّذِیۡ یُوَسۡوِسُ فِیۡ صُدُوۡرِ النَّاسِ ۙ﴿۵﴾مِنَ الۡجِنَّۃِ وَ النَّاسِ ﴿۶

বাংলা উচ্চারণ :

কুল আউযু বিরাব্বিন নাস, মালিকিন্ নাস, ইলাহিন্ নাস, মিন্ শররিল ওয়াস্ ওয়াসিল খান্নাস, আল্লাযী ইউওযাসবিসু ফী ছুদুরিন্নাস, মিনা জিন্নাতি ওয়ান্নাস।

অর্থ : ‘বলো, আমি শরণ নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের, মানুষের অধীশ্বরের, মানুষের উপাস্যের, তার কুমন্ত্রণার অমঙ্গল হতে, যে সুযোগ মতো আসে ও সুযোগমতো সরে পড়ে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিন বা মানুষের মধ্য থেকে।’

সুরা নাস হলো পবিত্র কোরআনের ১১৪তম ও সর্বশেষ সুরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছিল। আয়াত সংখ্যা ৬টি এবং রুকু ১টি।

শানে নুযুল (অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট)

সুরা ফালাক ও সুরা নাস একসঙ্গে নাজিল হয়েছে। হুদাইবিয়ার ঘটনার পর লাবীদ ইবনে আসাম ও তার কন্যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ওপর যাদু করেছিল। ফলে তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন ও কষ্ট অনুভব করেন।

আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.)–কে জানিয়ে দেন কোথায়, কিভাবে এবং কে যাদু করেছে। সেই যাদু চিরুনি ও চুলের মাধ্যমে করা হয়েছিল এবং একটি পাথরের নিচে, যারওয়ান কূপের তলায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।

এই দুই সুরা (ফালাক ও নাস) নাজিল হওয়ার পর সেই যাদুর সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দুই সুরা পড়ে গিরা খুললে সাথে সাথেই তিনি সুস্থ হয়ে যান। এই দুই সুরা পড়লে যেকোনো যাদু ও অশুভ শক্তি থেকে হেফাজতে থাকা যায়।

ফজিলত

হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর এই দুই সুরা পড়ার তাগিদ দিয়েছেন।

এক হাদিসে আছে—
যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়বে, সে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।
(জামে তিরমিজি, হাদিস: ২৯০৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫২৩; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৯২৬৬; সুনানে নাসাঈ ২/১৫৪; তাফসির ইবনে কাসীর ৪/৯১৭)

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত—
রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে শোবার আগে উভয় হাত একত্র করে তাতে ফুঁ দিতেন, এরপর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়তেন। তারপর যতটুকু সম্ভব দেহে হাত বুলিয়ে নিতেন—মাথা, মুখ ও শরীরের সামনের দিক থেকে শুরু করে পুরো শরীরে। তিনি এভাবে তিনবার করতেন।
(সহিহ বুখারি: ৫০১৭; সুনানে আবু দাউদ: ৫০৫৮; জামে তিরমিজি: ৩৪০২)

হজরত উকবা ইবনে আমের জুহানি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“আমার ওপর কিছু আয়াত নাজিল হয়েছে, এর মতো আর কিছু নাজিল হয়নি—‘কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক’ ও ‘কুল আউযু বিরাব্বিন নাস’।’’
(জামে তিরমিজি: ২৯০২)

সুরা নাসের আমল

🔹 সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত পড়া।
🔹 নামাজের পর পড়া।
🔹 শোবার আগে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে হাত বুলানো সুন্নত।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুরা নাসের বার্তা মেনে অশুভ শক্তি, শয়তানি কুমন্ত্রণার হাত থেকে হেফাজত করুন। আমিন!

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

প্রতিবেদক : মাহমুদুল হাসান

সম্পাদনায় : সুমাইয়া ইসলাম/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

সূরা আন-নাস তেলাওয়াতের ফজিলত

Update Time : 01:15:22 pm, Sunday, 13 July 2025

🌙সুরা নাস (سورة الناس)

সুরা নাসের উচ্চারণ ও অর্থ

আরবি :

قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ النَّاسِ ۙ﴿۱﴾ مَلِکِ النَّاسِ ۙ﴿۲﴾﴾اِلٰهِ النَّاسِ ۙ﴿۳﴾مِنۡ شَرِّ الۡوَسۡوَاسِ ۬ۙ الۡخَنَّاسِ ۪ۙ﴿۴﴾الَّذِیۡ یُوَسۡوِسُ فِیۡ صُدُوۡرِ النَّاسِ ۙ﴿۵﴾مِنَ الۡجِنَّۃِ وَ النَّاسِ ﴿۶

বাংলা উচ্চারণ :

কুল আউযু বিরাব্বিন নাস, মালিকিন্ নাস, ইলাহিন্ নাস, মিন্ শররিল ওয়াস্ ওয়াসিল খান্নাস, আল্লাযী ইউওযাসবিসু ফী ছুদুরিন্নাস, মিনা জিন্নাতি ওয়ান্নাস।

অর্থ : ‘বলো, আমি শরণ নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের, মানুষের অধীশ্বরের, মানুষের উপাস্যের, তার কুমন্ত্রণার অমঙ্গল হতে, যে সুযোগ মতো আসে ও সুযোগমতো সরে পড়ে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিন বা মানুষের মধ্য থেকে।’

সুরা নাস হলো পবিত্র কোরআনের ১১৪তম ও সর্বশেষ সুরা। এটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছিল। আয়াত সংখ্যা ৬টি এবং রুকু ১টি।

শানে নুযুল (অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট)

সুরা ফালাক ও সুরা নাস একসঙ্গে নাজিল হয়েছে। হুদাইবিয়ার ঘটনার পর লাবীদ ইবনে আসাম ও তার কন্যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর ওপর যাদু করেছিল। ফলে তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন ও কষ্ট অনুভব করেন।

আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.)–কে জানিয়ে দেন কোথায়, কিভাবে এবং কে যাদু করেছে। সেই যাদু চিরুনি ও চুলের মাধ্যমে করা হয়েছিল এবং একটি পাথরের নিচে, যারওয়ান কূপের তলায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।

এই দুই সুরা (ফালাক ও নাস) নাজিল হওয়ার পর সেই যাদুর সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দুই সুরা পড়ে গিরা খুললে সাথে সাথেই তিনি সুস্থ হয়ে যান। এই দুই সুরা পড়লে যেকোনো যাদু ও অশুভ শক্তি থেকে হেফাজতে থাকা যায়।

ফজিলত

হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর এই দুই সুরা পড়ার তাগিদ দিয়েছেন।

এক হাদিসে আছে—
যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়বে, সে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।
(জামে তিরমিজি, হাদিস: ২৯০৩; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫২৩; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৯২৬৬; সুনানে নাসাঈ ২/১৫৪; তাফসির ইবনে কাসীর ৪/৯১৭)

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত—
রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে শোবার আগে উভয় হাত একত্র করে তাতে ফুঁ দিতেন, এরপর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়তেন। তারপর যতটুকু সম্ভব দেহে হাত বুলিয়ে নিতেন—মাথা, মুখ ও শরীরের সামনের দিক থেকে শুরু করে পুরো শরীরে। তিনি এভাবে তিনবার করতেন।
(সহিহ বুখারি: ৫০১৭; সুনানে আবু দাউদ: ৫০৫৮; জামে তিরমিজি: ৩৪০২)

হজরত উকবা ইবনে আমের জুহানি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
“আমার ওপর কিছু আয়াত নাজিল হয়েছে, এর মতো আর কিছু নাজিল হয়নি—‘কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক’ ও ‘কুল আউযু বিরাব্বিন নাস’।’’
(জামে তিরমিজি: ২৯০২)

সুরা নাসের আমল

🔹 সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত পড়া।
🔹 নামাজের পর পড়া।
🔹 শোবার আগে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে হাত বুলানো সুন্নত।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুরা নাসের বার্তা মেনে অশুভ শক্তি, শয়তানি কুমন্ত্রণার হাত থেকে হেফাজত করুন। আমিন!

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

প্রতিবেদক : মাহমুদুল হাসান

সম্পাদনায় : সুমাইয়া ইসলাম/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল