মৌলভীবাজার | ১২ জুলাই ২০২৫ —
অভাব! শব্দটি খুব ছোট হলেও এর ওজন অনেক ভারী। কারো কাছে অভাব মানে একমুঠো ভাতের জন্য হাহাকার, কারো কাছে ভালো কাপড়ের জন্য লজ্জা, কারো কাছে আবার স্বপ্ন পূরণের অক্ষমতা।
খোকন মিয়া আমাদেরই মতো এক মানুষ—কারো ভাই, কারো স্বামী, কারো বাবা। প্রতিদিন সকাল হলে তার ছোট ছেলে-মেয়েরা আবদার করে, “বাবা, ফিরতি পথে চকোলেট এনো, নতুন জামা কিনে দিও!” খোকন হাসে, মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, কিন্তু প্রতিশ্রুতি রাখতে পারে না। কারণ, তার পকেটে থাকে অভাব নামক শূন্যতা।
রাত করে বাড়ি ফিরলে খোকনের বউ মন খারাপ করে বসে থাকে—সেই মন খারাপের জবাব খোকনের কাছে একটাই, “কাজের খোঁজে ছিলাম, না করলে চলবে কিভাবে?” সংসারের জ্বালা, বাজারের দেনা, বাচ্চাদের স্কুলের ফি—সবই অভাবের ছোট-বড় শেকল হয়ে তাকে বেঁধে রাখে।
তবে খোকনের সবচেয়ে বড় অভাব টাকা নয়। তার সবচেয়ে বড় অভাব—মানুষের পাশে না থাকা। বাজারের আনাজ বিক্রেতা ঝিনুক মিয়া মজা করে বলে, “চাচা যতদিন আছেন, খেয়ে যাও। চাচা না থাকলে টের পাবি অভাব কাকে বলে!” বন্ধুরা আড্ডায় মজা করে—“খোকনের ভাগ্য বদলাবে?”, “না না, কোনোদিন না!” হাসি-ঠাট্টার আড়ালে খোকন শোনে তার জীবনের অমোঘ সত্য—সঙ্গীহীন অভাব!
খোকন একদিন বলেছিল—“জানেন, ভাই? আমার কাছে অভাব মানে টাকা-পয়সা না, অভাব হলো কাছের মানুষ দূরে সরে যাওয়া, বিপদে পাশে না দাঁড়ানো।”
আমাদের সমাজে এমন খোকন আছে হাজার হাজার। কেউ শ্রমিক, কেউ দিনমজুর, কেউ স্বপ্নের পিছনে ছুটতে ছুটতে হাপিয়ে যাওয়া কোনো চাকরিজীবী। কিছু মানুষ রোজ শূন্য পকেটে ভাত খোঁজে, কিছু মানুষ শূন্য হৃদয়ে একটু ভালোবাসা খোঁজে। অভাব একেক জনের কাছে একেক রকম।
আমরা সবাই চাই—বাড়ি হোক, গাড়ি হোক, মনের মতো চাকরি হোক। চাহিদার শেষ নেই। সেই চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম পড়লেই অভাব। আর সেই প্রাপ্তি যখন টাকার চেয়ে ভালোবাসা, সহমর্মিতা, স্বস্তি—তখন সেই অভাব সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক।
আমরা যদি একবার চোখ খুলে চারপাশের খোকনদের দেখি, যদি কারো হাতে একমুঠো চাল তুলে দিতে পারি, যদি কারো কাঁধে সান্ত্বনার হাত রাখতে পারি—তাহলেই হয়তো সামান্য হলেও অভাব দূর হবে। সমাজে টাকার অভাব থাকলেও মনের অভাব থাকবে না।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে—আমরা নিজেরাই অভাবে ভুগি, সবচেয়ে বেশি সহানুভূতির অভাবে।
তাই অভাব থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের শিখতে হবে সীমিত চাহিদায় বাঁচতে। শিখতে হবে হাসিমুখে পাশে দাঁড়াতে, শিখতে হবে একে অপরের কষ্ট ভাগ করে নিতে। তবেই হয়তো একদিন খোকনের চোখে সত্যিকারের হাসি ফুটবে—যে হাসি হবে না কোনো ভান, হবে না কোনো আত্মগোপন।
অভাব থাকবে না—একটা সমাজ থাকবে যেখানে “অভাবী” শব্দটা কেবল অভিধানেই থাকবে, মানুষের জীবনে নয়।
রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com
সালেহ আহমদ (স’লিপক), লেখক: কবি, গীতিকার, আহ্বায়ক, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমাজকল্যাণ সমিতি (বিজেএসডব্লিউএ)
সম্পাদনায় : সুমাইয়া ইসলাম/ তাবাসসুম/ মিনারা আজমী
Reporter Name 


























