2:16 pm, Sunday, 23 November 2025

ইলিয়াস হোসেন: একুশের চোখ থেকে ইউটিউব কেলেঙ্কারি — সাংবাদিকতা কি ভিউয়ের কাছে হেরে যাচ্ছে?

  • Reporter Name
  • Update Time : 09:17:54 am, Saturday, 12 July 2025
  • 57 Time View

ঢাকা | ১২ জুলাই ২০২৫ —

এক সময়ের পরিচিত টিভি সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন এখন প্রবাসে বসে ইউটিউবে বিতর্কিত ভিডিও বানাচ্ছেন। অজানা গোপন কাহিনি, ব্যক্তিগত বিষয় ফাঁস আর রাজনৈতিক আক্রমণ — সবই ভিউ আর সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর খেলা।
কিন্তু একেই কি সাংবাদিকতা বলা যায়?

একুশে টিভি থেকে আদালতের দণ্ড

ইলিয়াস হোসেন একুশে টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘একুশের চোখ’-এর রিপোর্টার ছিলেন। অনুসন্ধানী রিপোর্টিং করতে গিয়ে ২০১৩ সালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোনা চোরাচালান নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রচার করেন, যা নিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি মানহানির মামলা করেন।

ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত ২০১৭ সালে ইলিয়াস হোসেনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন, যদিও রায়ের সময় তিনি পলাতক ছিলেন।

মুক্তিবানী নিউজ-এর সম্পাদকের বক্তব্য

মুক্তিবানী নিউজ-এর সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বলেন,

“সাংবাদিকতার নীতি হলো সত্য যাচাই করা, মানুষের অধিকার ও গোপনীয়তা রক্ষা করা। কোনো সাংবাদিক যখন নিজের পরিচয় ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কাহিনি বা গোপন তথ্য ফাঁস করে, তখন সে আসলে পুরো সাংবাদিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা মুক্তিবানী নিউজ-এ এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন চর্চার ঘোর বিরোধী।”

মিডিয়া বিশেষজ্ঞের মন্তব্য

ড. আসিফ হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞ, বলেন —

“অনেক সাংবাদিক ইউটিউবকে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে নিচ্ছেন, এটা ভালো। কিন্তু সমস্যা হয় যখন ভিউয়ের লোভে তথ্য যাচাই না করে গুজব ছড়ানো হয়, বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অশালীন উপস্থাপনা করা হয়। এতে সাংবাদিকতার মূল নীতি ও পাবলিক ট্রাস্ট দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

ইসলামি চিন্তাবিদের দৃষ্টিকোণ

ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা মুজিবুল হক বলেন —

“ইসলামে কারো ব্যক্তিগত গোপন বিষয় অনাবশ্যকভাবে প্রকাশ করা সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেছেন: ‘হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না।’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১২)
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বের করে ফাঁস করে, আল্লাহ তার গোপন দোষও ফাঁস করে দেবেন।’ (তিরমিজি)।
সুতরাং কোনো সংবাদ বা তথ্য যদি জনস্বার্থে না হয়, বরং কাউকে হেয় করা বা লজ্জিত করার উদ্দেশ্যে হয়, তবে তা ইসলামী নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

সাংবাদিকতা নাকি গসিপ চ্যানেল

এক সময়ের অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন আজ ভিউ আর সাবস্ক্রাইবারের দৌড়ে নিজের পরিচয়ই ভিন্ন করে ফেলেছেন। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকতার মর্যাদা, মানুষের আস্থা, এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা।

উপসংহার

সাংবাদিকতা মানে দায়িত্ব, সততা ও গোপনীয়তার সুরক্ষা। ব্যক্তি আক্রমণ আর গুজব ছড়িয়ে ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া কখনোই সত্যিকারের সাংবাদিকতা নয়।
এখনই সময় পাঠক, দর্শক ও গণমাধ্যমকে সচেতন হওয়ার — যাতে সাংবাদিকতার নামে গসিপ আর চরিত্র হননকে আমরা প্রশ্রয় না দেই।

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

প্রতিবেদক : এস এম মেহেদী হাসান

সম্পাদনায় : সুমাইয়া ইসলাম/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

ইলিয়াস হোসেন: একুশের চোখ থেকে ইউটিউব কেলেঙ্কারি — সাংবাদিকতা কি ভিউয়ের কাছে হেরে যাচ্ছে?

Update Time : 09:17:54 am, Saturday, 12 July 2025

ঢাকা | ১২ জুলাই ২০২৫ —

এক সময়ের পরিচিত টিভি সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন এখন প্রবাসে বসে ইউটিউবে বিতর্কিত ভিডিও বানাচ্ছেন। অজানা গোপন কাহিনি, ব্যক্তিগত বিষয় ফাঁস আর রাজনৈতিক আক্রমণ — সবই ভিউ আর সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর খেলা।
কিন্তু একেই কি সাংবাদিকতা বলা যায়?

একুশে টিভি থেকে আদালতের দণ্ড

ইলিয়াস হোসেন একুশে টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘একুশের চোখ’-এর রিপোর্টার ছিলেন। অনুসন্ধানী রিপোর্টিং করতে গিয়ে ২০১৩ সালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোনা চোরাচালান নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রচার করেন, যা নিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি মানহানির মামলা করেন।

ঢাকার মহানগর হাকিম আদালত ২০১৭ সালে ইলিয়াস হোসেনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন, যদিও রায়ের সময় তিনি পলাতক ছিলেন।

মুক্তিবানী নিউজ-এর সম্পাদকের বক্তব্য

মুক্তিবানী নিউজ-এর সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বলেন,

“সাংবাদিকতার নীতি হলো সত্য যাচাই করা, মানুষের অধিকার ও গোপনীয়তা রক্ষা করা। কোনো সাংবাদিক যখন নিজের পরিচয় ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কাহিনি বা গোপন তথ্য ফাঁস করে, তখন সে আসলে পুরো সাংবাদিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা মুক্তিবানী নিউজ-এ এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন চর্চার ঘোর বিরোধী।”

মিডিয়া বিশেষজ্ঞের মন্তব্য

ড. আসিফ হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞ, বলেন —

“অনেক সাংবাদিক ইউটিউবকে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে নিচ্ছেন, এটা ভালো। কিন্তু সমস্যা হয় যখন ভিউয়ের লোভে তথ্য যাচাই না করে গুজব ছড়ানো হয়, বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অশালীন উপস্থাপনা করা হয়। এতে সাংবাদিকতার মূল নীতি ও পাবলিক ট্রাস্ট দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

ইসলামি চিন্তাবিদের দৃষ্টিকোণ

ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা মুজিবুল হক বলেন —

“ইসলামে কারো ব্যক্তিগত গোপন বিষয় অনাবশ্যকভাবে প্রকাশ করা সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেছেন: ‘হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না।’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত ১২)
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বের করে ফাঁস করে, আল্লাহ তার গোপন দোষও ফাঁস করে দেবেন।’ (তিরমিজি)।
সুতরাং কোনো সংবাদ বা তথ্য যদি জনস্বার্থে না হয়, বরং কাউকে হেয় করা বা লজ্জিত করার উদ্দেশ্যে হয়, তবে তা ইসলামী নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

সাংবাদিকতা নাকি গসিপ চ্যানেল

এক সময়ের অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন আজ ভিউ আর সাবস্ক্রাইবারের দৌড়ে নিজের পরিচয়ই ভিন্ন করে ফেলেছেন। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকতার মর্যাদা, মানুষের আস্থা, এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা।

উপসংহার

সাংবাদিকতা মানে দায়িত্ব, সততা ও গোপনীয়তার সুরক্ষা। ব্যক্তি আক্রমণ আর গুজব ছড়িয়ে ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া কখনোই সত্যিকারের সাংবাদিকতা নয়।
এখনই সময় পাঠক, দর্শক ও গণমাধ্যমকে সচেতন হওয়ার — যাতে সাংবাদিকতার নামে গসিপ আর চরিত্র হননকে আমরা প্রশ্রয় না দেই।

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

প্রতিবেদক : এস এম মেহেদী হাসান

সম্পাদনায় : সুমাইয়া ইসলাম/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল