1:20 pm, Sunday, 23 November 2025

সুরা ইখলাসের ফজিলত: তওহিদের ঘোষণা, জান্নাতের বার্তা

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:34:54 am, Friday, 11 July 2025
  • 36 Time View

রূপান্তর ডেস্ক | ঢাকা | ১১ জুলাই ২০২৫ —

সুরা ইখলাস: পরিচয় ও তাৎপর্য

পবিত্র কোরআনের ১১২ নম্বর সুরা সুরা ইখলাস ইসলামের তওহিদের মূল ভিত্তিকে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত অথচ গভীরভাবে ব্যাখ্যা করেছে। ‘ইখলাস’ অর্থ—খাঁটি বিশ্বাস, একনিষ্ঠতা, শিরকমুক্ত পরিচ্ছন্ন ঈমান।

এটি মাত্র চার আয়াতের হলেও এর গুরুত্ব অসীম—একে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য বলা হয়।

কেন এই সুরা নাজিল হয়?

মক্কার অবিশ্বাসীরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করেছিল, “আপনার রব কারো সন্তান কি? তাঁর বংশপরিচয় কী?” তখনই সুরা ইখলাস নাজিল হয়—যাতে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়, আল্লাহ তাআলা অদ্বিতীয়, অযুগল ও সবার ঊর্ধ্বে।

কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান

সহিহ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন— “সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।”
(মুসলিম, তিরমিজি)
এটি বোঝায়, ইসলামের বিশ্বাসের তিন ভিত্তির (তওহিদ, রিসালাত, আখিরাত) মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদ এই সুরার মাধ্যমে পূর্ণভাবে প্রকাশিত।

জান্নাতের সুসংবাদ

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যে ব্যক্তি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
(মুসনাদে আহমদ ৩/১৪১)

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, এক সাহাবি যিনি সব নামাজে সুরা ইখলাস পাঠ করতেন, তাঁকে রাসুল (সা.) বলেছিলেন— “তুমি যাকে ভালোবাসো, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন।” (বুখারি)

রক্ষা ও নিরাপত্তার দোয়া

সকাল-বিকেল তিন কুল (ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়ার ফজিলত অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যে ব্যক্তি এ সুরাগুলো সকাল-সন্ধ্যা পড়ে, তাকে বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট হয়।”
(আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী)

ঘুমের আগে রাসুল (সা.) হাতের তালুতে এই সুরাগুলো পড়ে দম করতেন ও পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে দিতেন। (বুখারি)

অর্থ ও বাণী

“বল, তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়।
আল্লাহ, যিনি সব কিছুর মুখাপেক্ষিতা মুক্ত।
তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি।
আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।”

(সুরা ইখলাস, আয়াত ১-৪)

তওহিদের ভিত্তি

তওহিদ বা একত্ববাদ ইসলামের মূল স্তম্ভ। সুরা ইখলাসে সেই বার্তাই স্পষ্ট—
আল্লাহ সর্বশক্তিমান, অদ্বিতীয়, কারও সাদৃশ্য নেই। শিরক থেকে মুক্ত বিশ্বাসী হওয়ার নামই ইখলাস।

বিশেষ ফজিলত

তিনবার সুরা ইখলাস পাঠ = এক খতম কোরআনের সওয়াব (সহিহ হাদিস)
প্রতিটি ফরজ নামাজের পর ১০ বার পাঠ করলে জান্নাতের দরজা সহজ হয় (তাফসিরে ইবনে কাসির)
বিপদাপদ ও অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত পড়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত

শেষ কথা

চার আয়াতের এই ছোট্ট সুরা এক খণ্ড তওহিদ। যার হৃদয়ে ইখলাস আছে, তার অন্তর পাপ থেকে শুদ্ধ হয়, ভয়-ভীতি কেটে যায়, জান্নাতের দরজা খুলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী, সুরা ইখলাসকে ভালোবাসা মানেই আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা।

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

লেখক : শেখ সাদ আহমদ বর্ণভী। মোহতামিম, মিশকাতুল কোরআন মাদরাসা, মৌলভীবাজার।

 

সম্পাদনায় : আসমা/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

সুরা ইখলাসের ফজিলত: তওহিদের ঘোষণা, জান্নাতের বার্তা

Update Time : 07:34:54 am, Friday, 11 July 2025

রূপান্তর ডেস্ক | ঢাকা | ১১ জুলাই ২০২৫ —

সুরা ইখলাস: পরিচয় ও তাৎপর্য

পবিত্র কোরআনের ১১২ নম্বর সুরা সুরা ইখলাস ইসলামের তওহিদের মূল ভিত্তিকে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত অথচ গভীরভাবে ব্যাখ্যা করেছে। ‘ইখলাস’ অর্থ—খাঁটি বিশ্বাস, একনিষ্ঠতা, শিরকমুক্ত পরিচ্ছন্ন ঈমান।

এটি মাত্র চার আয়াতের হলেও এর গুরুত্ব অসীম—একে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য বলা হয়।

কেন এই সুরা নাজিল হয়?

মক্কার অবিশ্বাসীরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করেছিল, “আপনার রব কারো সন্তান কি? তাঁর বংশপরিচয় কী?” তখনই সুরা ইখলাস নাজিল হয়—যাতে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়, আল্লাহ তাআলা অদ্বিতীয়, অযুগল ও সবার ঊর্ধ্বে।

কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান

সহিহ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন— “সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।”
(মুসলিম, তিরমিজি)
এটি বোঝায়, ইসলামের বিশ্বাসের তিন ভিত্তির (তওহিদ, রিসালাত, আখিরাত) মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদ এই সুরার মাধ্যমে পূর্ণভাবে প্রকাশিত।

জান্নাতের সুসংবাদ

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যে ব্যক্তি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
(মুসনাদে আহমদ ৩/১৪১)

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, এক সাহাবি যিনি সব নামাজে সুরা ইখলাস পাঠ করতেন, তাঁকে রাসুল (সা.) বলেছিলেন— “তুমি যাকে ভালোবাসো, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন।” (বুখারি)

রক্ষা ও নিরাপত্তার দোয়া

সকাল-বিকেল তিন কুল (ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়ার ফজিলত অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যে ব্যক্তি এ সুরাগুলো সকাল-সন্ধ্যা পড়ে, তাকে বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট হয়।”
(আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী)

ঘুমের আগে রাসুল (সা.) হাতের তালুতে এই সুরাগুলো পড়ে দম করতেন ও পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে দিতেন। (বুখারি)

অর্থ ও বাণী

“বল, তিনি আল্লাহ, এক ও অদ্বিতীয়।
আল্লাহ, যিনি সব কিছুর মুখাপেক্ষিতা মুক্ত।
তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি।
আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।”

(সুরা ইখলাস, আয়াত ১-৪)

তওহিদের ভিত্তি

তওহিদ বা একত্ববাদ ইসলামের মূল স্তম্ভ। সুরা ইখলাসে সেই বার্তাই স্পষ্ট—
আল্লাহ সর্বশক্তিমান, অদ্বিতীয়, কারও সাদৃশ্য নেই। শিরক থেকে মুক্ত বিশ্বাসী হওয়ার নামই ইখলাস।

বিশেষ ফজিলত

তিনবার সুরা ইখলাস পাঠ = এক খতম কোরআনের সওয়াব (সহিহ হাদিস)
প্রতিটি ফরজ নামাজের পর ১০ বার পাঠ করলে জান্নাতের দরজা সহজ হয় (তাফসিরে ইবনে কাসির)
বিপদাপদ ও অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত পড়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত

শেষ কথা

চার আয়াতের এই ছোট্ট সুরা এক খণ্ড তওহিদ। যার হৃদয়ে ইখলাস আছে, তার অন্তর পাপ থেকে শুদ্ধ হয়, ভয়-ভীতি কেটে যায়, জান্নাতের দরজা খুলে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী, সুরা ইখলাসকে ভালোবাসা মানেই আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা।

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

লেখক : শেখ সাদ আহমদ বর্ণভী। মোহতামিম, মিশকাতুল কোরআন মাদরাসা, মৌলভীবাজার।

 

সম্পাদনায় : আসমা/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল