বিশেষ প্রতিবেদন | ঢাকা | ১০ জুলাই ২০২৫ —
দেশে ধর্ষণ যেন আর বিচ্ছিন্ন কোনো অপরাধ নয়— দিনের পর দিন এ ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজ, আইন ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বড় প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। বগুড়ায় এক শিক্ষানবিশ নারী আইনজীবীকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে পাবনার চাটমোহর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রশিদকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেলে বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জিয়া উদ্দিন মাহমুদ এ নির্দেশ দেন। তদন্তে প্রমাণিত হয়, ২০২৪ সালের ১৩ এপ্রিল ওই নারীকে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাহালুতে নিয়ে গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন অভিযুক্ত কর্মকর্তা। পরে তিনি ভিকটিমকে এড়িয়ে যেতে থাকেন। ভুক্তভোগী আইনি লড়াইয়ে নামলে আদালতের নির্দেশে প্রায় এক বছর পর রিপোর্ট জমা দেয় পুলিশ।
আইনের চোখে এমন অপরাধ
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও নারী অধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট শাহনাজ পারভীন বলেন,
‘‘বাংলাদেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী ধর্ষণ একটি অজামিনযোগ্য অপরাধ। এখানে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ স্পষ্টতই ‘consensual’ নয়— কারণ প্রতারণা বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ভিকটিমের সম্মতি নষ্ট করে দেয়। দোষ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। তবে দেশে এখনো বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা ও সাক্ষীর অভাবে বহু মামলা ধামাচাপা পড়ে যায়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ধরনের মামলায় ভুক্তভোগীর মেডিকেল রিপোর্ট, ডিজিটাল প্রমাণ ও আদালতে স্পষ্ট সাক্ষ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল কার্যকর হলে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ রোধে একটি শক্ত বার্তা যাবে।’’
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ
বাংলাদেশের বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেম মাওলানা মুফতি মাহমুদুল হাসান বলেন,
‘‘ইসলামে ধর্ষণ সবচেয়ে ঘৃণিত অপরাধগুলোর একটি। কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে— ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইয়ো না।’ (সূরা ইসরা, আয়াত ৩২)। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, কোনো পুরুষ যদি জোরপূর্বক নারীর ইজ্জত নষ্ট করে, তা জিনা হিসেবে গণ্য হবে এবং শরীয়তের কঠোর শাস্তি প্রযোজ্য হবে। ইসলামী দণ্ডবিধিতে এ অপরাধের জন্য শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে নৈতিকতা, পারিবারিক শিক্ষা ও আল্লাহভীতি কমে যাওয়ায় ধর্ষণের মতো গর্হিত অপরাধ বাড়ছে। ইসলামের আলোকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একযোগে প্রতিরোধে দাঁড়াতে হবে।’’
ধর্ষণের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণের মামলা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৪০০টির বেশি। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ভুক্তভোগী শিশু ও কিশোরী। তাছাড়া প্রতিটি ঘটনার পেছনে থাকে বহু অনিয়ম, ভয়ভীতি, সামাজিক লজ্জা আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি।
শেষ কথাঃ
একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী যখন নিজেই এমন অন্যায়ের শিকার হন, তখন এটিকে নিছক একটি মামলা হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। আইনের শাসন, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতা— এই তিনটির সমন্বয়ই পারে ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট অপরাধ বন্ধ করতে। মামুনুর রশিদের মামলাটি যেন শুধু শাস্তির দৃষ্টান্ত না হয়— এটি হতে হবে নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে নতুন সামাজিক আন্দোলনেরও এক অনুকরণীয় উদাহরণ।
রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com
প্রতিবেদক : এস এম মেহেদী হাসান
সম্পাদনায় : আসমা/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল
Reporter Name 



























