12:58 pm, Sunday, 23 November 2025

ফ্রান্সে কমেছে বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা

  • Reporter Name
  • Update Time : 01:13:43 pm, Sunday, 29 June 2025
  • 61 Time View

প্যারিস, ২০ জুন ২০২৫ — ফ্রান্সে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি বিষয়ক ফরাসি দপ্তর (অফপ্রা)। ২০ জুন প্রকাশিত সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে মোট ৬ হাজার ৯৫১ জন বাংলাদেশি প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদন করেছেন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ হাজার ৬০০। এই হ্রাসের ফলে বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচ আবেদনকারী দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে ষষ্ঠ স্থানে নেমে গেছে।

অফপ্রার তথ্য অনুযায়ী, সর্বাধিক আবেদনকারীর তালিকায় টানা সপ্তম বছরের মতো শীর্ষে রয়েছে আফগানিস্তান। দেশটি থেকে ১২ হাজার ৩৭৮টি আবেদন জমা পড়েছে, যদিও এই সংখ্যাও ২০২৩ সালের তুলনায় ২৯.৫ শতাংশ কম।

দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন। দেশটি থেকে ১১ হাজার ৮১৪টি নতুন আবেদন জমা পড়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি (১০ হাজার ৩২৭টি আবেদন), চতুর্থ স্থানে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (৯ হাজার ৪৮১) এবং পঞ্চম স্থানে আইভরি কোস্ট (৮ হাজার ৮৫১)।

তালিকায় চমকপ্রদভাবে প্রবেশ করেছে ক্যারিবীয় দেশ হাইতি, যেখানে আবেদন সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭৪৬-এ। অন্যদিকে তুরস্কের আবেদন ৩০ শতাংশ কমে ছয় হাজার ৩১-এ নেমে এসেছে। জর্জিয়া থেকে আসা আবেদনকারীর সংখ্যা ৪৫.১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৯৫-এ।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব

বাংলাদেশে দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিগত বছরগুলোতে আশ্রয় আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছিল। ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থাকে কর্তৃত্ববাদী আখ্যা দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে এই সংখ্যা আরও আলোচনায় আসে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যায়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের অনেক নেতা-কর্মী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন, যার প্রভাব আগামী বছর ইউরোপের আশ্রয় ব্যবস্থায় দেখা যেতে পারে।

বাংলাদেশিদের স্বীকৃতির হার এখনও কম

২০২৪ সালে ফ্রান্সে মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭১৫টি আশ্রয় আবেদন (প্রথম ও পুনঃআবেদন মিলিয়ে) জমা পড়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭.৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ২৯টি ছিল প্রথম আবেদন।

সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা পেয়েছে আফগান নাগরিকরা — বিশেষ করে আফগান নারীদের সুরক্ষা প্রদানের হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। তবে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বিপুলসংখ্যক আবেদন সত্ত্বেও মাত্র ৪৫৩ জন বাংলাদেশি পূর্ণাঙ্গ শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছেন এবং ১৬৫ জনকে অস্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

অফপ্রার হিসাবে, বাংলাদেশি আবেদনকারীদের সুরক্ষা পাওয়ার হার মাত্র ৮.৩৪ শতাংশ, যা সামগ্রিক গড় ৩৯ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

প্রত্যাখ্যাতদের জন্য ফ্রান্সের জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ)-তে আপিলের সুযোগ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদালত অনেক আবেদন সরাসরি বাতিল করে দিচ্ছে, ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আশ্রয় পাওয়ার পথ ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

বিশেষ প্রতিবেদক : মাহমুদুল হাসান

সম্পাদনায় : তাবাসসুম/ আসমা/ মেহেদী

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

ফ্রান্সে কমেছে বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা

Update Time : 01:13:43 pm, Sunday, 29 June 2025

প্যারিস, ২০ জুন ২০২৫ — ফ্রান্সে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২০২৪ সালে আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি বিষয়ক ফরাসি দপ্তর (অফপ্রা)। ২০ জুন প্রকাশিত সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে মোট ৬ হাজার ৯৫১ জন বাংলাদেশি প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে আশ্রয় আবেদন করেছেন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ হাজার ৬০০। এই হ্রাসের ফলে বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচ আবেদনকারী দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে ষষ্ঠ স্থানে নেমে গেছে।

অফপ্রার তথ্য অনুযায়ী, সর্বাধিক আবেদনকারীর তালিকায় টানা সপ্তম বছরের মতো শীর্ষে রয়েছে আফগানিস্তান। দেশটি থেকে ১২ হাজার ৩৭৮টি আবেদন জমা পড়েছে, যদিও এই সংখ্যাও ২০২৩ সালের তুলনায় ২৯.৫ শতাংশ কম।

দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন। দেশটি থেকে ১১ হাজার ৮১৪টি নতুন আবেদন জমা পড়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি (১০ হাজার ৩২৭টি আবেদন), চতুর্থ স্থানে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (৯ হাজার ৪৮১) এবং পঞ্চম স্থানে আইভরি কোস্ট (৮ হাজার ৮৫১)।

তালিকায় চমকপ্রদভাবে প্রবেশ করেছে ক্যারিবীয় দেশ হাইতি, যেখানে আবেদন সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭৪৬-এ। অন্যদিকে তুরস্কের আবেদন ৩০ শতাংশ কমে ছয় হাজার ৩১-এ নেমে এসেছে। জর্জিয়া থেকে আসা আবেদনকারীর সংখ্যা ৪৫.১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৯৫-এ।

রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব

বাংলাদেশে দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিগত বছরগুলোতে আশ্রয় আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছিল। ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থাকে কর্তৃত্ববাদী আখ্যা দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে এই সংখ্যা আরও আলোচনায় আসে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যায়।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের অনেক নেতা-কর্মী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিচ্ছেন, যার প্রভাব আগামী বছর ইউরোপের আশ্রয় ব্যবস্থায় দেখা যেতে পারে।

বাংলাদেশিদের স্বীকৃতির হার এখনও কম

২০২৪ সালে ফ্রান্সে মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭১৫টি আশ্রয় আবেদন (প্রথম ও পুনঃআবেদন মিলিয়ে) জমা পড়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭.৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ২৯টি ছিল প্রথম আবেদন।

সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা পেয়েছে আফগান নাগরিকরা — বিশেষ করে আফগান নারীদের সুরক্ষা প্রদানের হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। তবে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বিপুলসংখ্যক আবেদন সত্ত্বেও মাত্র ৪৫৩ জন বাংলাদেশি পূর্ণাঙ্গ শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছেন এবং ১৬৫ জনকে অস্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

অফপ্রার হিসাবে, বাংলাদেশি আবেদনকারীদের সুরক্ষা পাওয়ার হার মাত্র ৮.৩৪ শতাংশ, যা সামগ্রিক গড় ৩৯ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

প্রত্যাখ্যাতদের জন্য ফ্রান্সের জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ)-তে আপিলের সুযোগ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদালত অনেক আবেদন সরাসরি বাতিল করে দিচ্ছে, ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আশ্রয় পাওয়ার পথ ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

বিশেষ প্রতিবেদক : মাহমুদুল হাসান

সম্পাদনায় : তাবাসসুম/ আসমা/ মেহেদী