1:20 pm, Sunday, 23 November 2025

হিজরী ১৪৪৭ সনের পবিত্র সূচনা ও জুম্মাবারের তাৎপর্য

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:19:28 am, Friday, 27 June 2025
  • 32 Time View

এস এম মেহেদী হাসান

আজকের দিনটি মুসলিম বিশ্বের জন্য বহুমাত্রিক তাৎপর্য বহন করছে। হিজরী সনের প্রথম দিন, ১লা মহররম ১৪৪৭, এবং একইসাথে শুক্রবার—জুম্মাবার। ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা, ইবাদত এবং আত্মসংযমের এক বিশেষ মুহূর্ত এই দিন। এটি শুধুই একটি ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাওয়া নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, আত্মসমীক্ষা এবং নতুন ইবাদতের সূচনার এক পরিপূর্ণ সুযোগ।

মহররম মাসের গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা বলেন:
“নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারটি, তার মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস; এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।”
— (সূরা আত-তাওবা: ৩৬)

চারটি সম্মানিত মাসের একটি হলো মহররম। এটি ইসলামী বর্ষপঞ্জির সূচনামাস এবং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“রমজানের পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রোযা হলো আল্লাহর মাস মহররমে রাখা রোযা।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩)

তিনি আরও বলেন:
“আশূরা দিবসে রোযা রাখা বিগত এক বছরের গোনাহ মাফের উপায়।”
— (সহীহ মুসলিম)

জুম্মাবারের ফজিলত

“হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।”
— (সূরা আল-জুমু‘আ: ৯)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমা। এই দিনেই আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে, এবং এই দিনেই তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে।”
— (সহীহ মুসলিম)

আরও বলেন:
“জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট কিছু চায় এবং তা যদি হারাম না হয়, আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।”
— (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

আজকের দিনের বিশেষতা

এই বছর হিজরী নববর্ষের শুরু হয়েছে এক জুম্মাবারে, যা এক অনন্য ও তাৎপর্যপূর্ণ সংমিশ্রণ। এই দিনটি ইতিহাস, আত্মশুদ্ধি, রুহানিয়াত এবং আল্লাহর রহমতের এক অসাধারণ উপলক্ষ।

বিশেষ তাৎপর্য:

  • হিজরী নববর্ষের সূচনা
  • সম্মানিত মহররম মাসের প্রথম দিন
  • জুম্মাবারের বরকতময়তা

করণীয়সমূহ

আজকের দিনে একজন মু’মিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল হতে পারে:

  • বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ
  • ইস্তেগফার ও আত্মসমালোচনা
  • সূরা কাহফ তেলাওয়াত (জুমার দিনের সুন্নাত আমল)
  • জুমার নামাজে উপস্থিতি ও খুতবা শ্রবণ
  • হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে নতুন পরিকল্পনা ও নেক নিয়ত
  • পরিমিতি অনুযায়ী নফল রোযার সংকল্প ও আমল

বিশেষ দোয়া (হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে)

اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلَامَةِ وَالإِسْلَامِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَانِ، وَجَوَازٍ مِنَ الشَّيْطَانِ

অর্থ:
হে আল্লাহ, আমাদের ওপর এই নববর্ষ আগমিত হোক নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি, ইসলাম, তোমার সন্তুষ্টি এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তির মাধ্যমে।

উপসংহার

হিজরী নববর্ষ ও জুম্মাবারের একত্রিত এই দিনটি আত্মশুদ্ধি, দোয়া, ইবাদত এবং আত্মউন্নয়নের এক বিশেষ সুযোগ। মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি এক দায়িত্বপূর্ণ মুহূর্ত—যেখানে ইবাদতের মাধ্যমে অতীত সংশোধন ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করা যায়।

আসুন, এই বিশেষ দিনে আমরা সবাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিজেদের নিয়োজিত করি।

বিশেষ প্রতিবেদক : এস এম মেহেদী হাসান

সম্পাদনায় : মাহমুদুল/ তাবাসসুম/ সালেহ আহমদ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

হিজরী ১৪৪৭ সনের পবিত্র সূচনা ও জুম্মাবারের তাৎপর্য

Update Time : 10:19:28 am, Friday, 27 June 2025

এস এম মেহেদী হাসান

আজকের দিনটি মুসলিম বিশ্বের জন্য বহুমাত্রিক তাৎপর্য বহন করছে। হিজরী সনের প্রথম দিন, ১লা মহররম ১৪৪৭, এবং একইসাথে শুক্রবার—জুম্মাবার। ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতা, ইবাদত এবং আত্মসংযমের এক বিশেষ মুহূর্ত এই দিন। এটি শুধুই একটি ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যাওয়া নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, আত্মসমীক্ষা এবং নতুন ইবাদতের সূচনার এক পরিপূর্ণ সুযোগ।

মহররম মাসের গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা বলেন:
“নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারটি, তার মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস; এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।”
— (সূরা আত-তাওবা: ৩৬)

চারটি সম্মানিত মাসের একটি হলো মহররম। এটি ইসলামী বর্ষপঞ্জির সূচনামাস এবং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“রমজানের পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রোযা হলো আল্লাহর মাস মহররমে রাখা রোযা।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩)

তিনি আরও বলেন:
“আশূরা দিবসে রোযা রাখা বিগত এক বছরের গোনাহ মাফের উপায়।”
— (সহীহ মুসলিম)

জুম্মাবারের ফজিলত

“হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।”
— (সূরা আল-জুমু‘আ: ৯)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমা। এই দিনেই আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে, এবং এই দিনেই তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে।”
— (সহীহ মুসলিম)

আরও বলেন:
“জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট কিছু চায় এবং তা যদি হারাম না হয়, আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।”
— (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

আজকের দিনের বিশেষতা

এই বছর হিজরী নববর্ষের শুরু হয়েছে এক জুম্মাবারে, যা এক অনন্য ও তাৎপর্যপূর্ণ সংমিশ্রণ। এই দিনটি ইতিহাস, আত্মশুদ্ধি, রুহানিয়াত এবং আল্লাহর রহমতের এক অসাধারণ উপলক্ষ।

বিশেষ তাৎপর্য:

  • হিজরী নববর্ষের সূচনা
  • সম্মানিত মহররম মাসের প্রথম দিন
  • জুম্মাবারের বরকতময়তা

করণীয়সমূহ

আজকের দিনে একজন মু’মিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল হতে পারে:

  • বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ
  • ইস্তেগফার ও আত্মসমালোচনা
  • সূরা কাহফ তেলাওয়াত (জুমার দিনের সুন্নাত আমল)
  • জুমার নামাজে উপস্থিতি ও খুতবা শ্রবণ
  • হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে নতুন পরিকল্পনা ও নেক নিয়ত
  • পরিমিতি অনুযায়ী নফল রোযার সংকল্প ও আমল

বিশেষ দোয়া (হিজরী নববর্ষ উপলক্ষে)

اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلَامَةِ وَالإِسْلَامِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَانِ، وَجَوَازٍ مِنَ الشَّيْطَانِ

অর্থ:
হে আল্লাহ, আমাদের ওপর এই নববর্ষ আগমিত হোক নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি, ইসলাম, তোমার সন্তুষ্টি এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তির মাধ্যমে।

উপসংহার

হিজরী নববর্ষ ও জুম্মাবারের একত্রিত এই দিনটি আত্মশুদ্ধি, দোয়া, ইবাদত এবং আত্মউন্নয়নের এক বিশেষ সুযোগ। মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি এক দায়িত্বপূর্ণ মুহূর্ত—যেখানে ইবাদতের মাধ্যমে অতীত সংশোধন ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করা যায়।

আসুন, এই বিশেষ দিনে আমরা সবাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিজেদের নিয়োজিত করি।

বিশেষ প্রতিবেদক : এস এম মেহেদী হাসান

সম্পাদনায় : মাহমুদুল/ তাবাসসুম/ সালেহ আহমদ