1:18 pm, Sunday, 23 November 2025

সিলেটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর অন্তঃসত্ত্বা, ফুফা কারাগারে

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:10:48 pm, Thursday, 26 June 2025
  • 30 Time View

ঢাকা। ২৬ জুন ২০২৫

সিলেট নগরীর এয়ারপোর্ট থানার রামপুর এলাকায় এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আত্মীয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৫ বছর বয়সী এই কিশোরী বর্তমানে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

অভিযুক্ত আব্দুল হালিম, স্থানীয় এক চিকিৎসকের ছেলে ও ভুক্তভোগীর ছোট ফুফুর স্বামী। পারিবারিক ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে সে দীর্ঘদিন ধরে কিশোরীকে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের মধ্যে রাখে। বিষয়টি পরিবারের অজানা থাকলেও শারীরিক পরিবর্তনের পর মেয়েটির কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়। পরে তার পিতা শায়েস্তা মিয়া বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করেন।

এয়ারপোর্ট থানার ওসি জানান, “মেয়েটির জবানবন্দি ও মেডিকেল পরীক্ষার ভিত্তিতে বুধবার বিকেলে অভিযুক্ত হালিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (OCC) চিকিৎসাধীন।”

আইন ও ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্ষণ

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে, ধর্ষণ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। শিশু ও কিশোরী ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রে অপরাধটি বিশেষভাবে সংবেদনশীল এবং রাষ্ট্র কর্তৃক কঠোর নজরদারির আওতায় থাকে।

ইসলামে ধর্ষণকে চরম অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল কুরআনে বলা হয়েছে:

“তোমরা নির্লজ্জ কাজের ধারে কাছেও যেয়ো না—তা প্রকাশ্য হোক বা গোপন।”
(সূরা আন’আম: ১৫১)

“যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে, তাদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড, কিংবা শূলে চড়ানো…”
(সূরা আল-মায়িদা: ৩৩)

হাদীসে এসেছে,

“যে ব্যক্তি জোর করে কোনো নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, তার ওপর হুদুদ (শাস্তি) প্রয়োগ করতে হবে।”
(আবু দাউদ: ৪৩৭৯)

শেখবাড়ী মাদ্রাসা মৌলভীবাজার’র শিক্ষক মুফতি তোফায়েল খাঁন বলেন, “ইসলামে নারীর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য যেমন পর্দার বিধান রয়েছে, তেমনি পুরুষদের চরিত্র সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের নির্দেশও রয়েছে। সমাজে ধর্ষণ বন্ধ করতে হলে উভয়পক্ষের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা অপরিহার্য।”

আইনজীবী ও ইসলামি চিন্তাবিদ অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ মম বলেন, “শরীয়ত মোতাবেক, ধর্ষণ ‘হদ’ পর্যায়ের অপরাধ। আদালতে প্রমাণিত হলে এর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর—যা কেবল অপরাধীকে নয়, সমাজকে নিরাপদ রাখার জন্য জরুরি।”

সচেতনতা ও প্রতিরোধ: আমাদের করণীয়

এই ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে সামাজিক, ধর্মীয় ও পারিবারিক স্তরে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে:

  • পরিবারে সচেতনতা বাড়ানো: শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে খোলামেলা ও আত্মবিশ্বাসভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
  • নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা: প্রাথমিক স্তর থেকেই ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইসলামী আদর্শ ও সংযমের শিক্ষা দেওয়া।
  • আইনি সচেতনতা: স্কুল-কলেজে নারী ও শিশু সুরক্ষা বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচি গ্রহণ।
  • সমাজে প্রতিবাদ ও প্রতিবেদন: অপরাধ গোপন না করে আইনের আশ্রয় নেওয়া এবং অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা।

শেষ কথা

এটি শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি সমাজের একটি গভীর সমস্যা, যা প্রতিটি পরিবারের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ধর্ম, নৈতিকতা ও আইনের সম্মিলিত প্রয়োগের মাধ্যমেই এই অন্ধকার থেকে সমাজকে মুক্ত করা সম্ভব।

বিশেষ প্রতিবেদক : এস এম মেহেদী হাসান

সম্পাদনায় : মাহমুদুল/ তাবাসসুম/ সালেহ আহমদ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

সিলেটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর অন্তঃসত্ত্বা, ফুফা কারাগারে

Update Time : 10:10:48 pm, Thursday, 26 June 2025

ঢাকা। ২৬ জুন ২০২৫

সিলেট নগরীর এয়ারপোর্ট থানার রামপুর এলাকায় এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে আত্মীয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৫ বছর বয়সী এই কিশোরী বর্তমানে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

অভিযুক্ত আব্দুল হালিম, স্থানীয় এক চিকিৎসকের ছেলে ও ভুক্তভোগীর ছোট ফুফুর স্বামী। পারিবারিক ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে সে দীর্ঘদিন ধরে কিশোরীকে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের মধ্যে রাখে। বিষয়টি পরিবারের অজানা থাকলেও শারীরিক পরিবর্তনের পর মেয়েটির কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়। পরে তার পিতা শায়েস্তা মিয়া বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করেন।

এয়ারপোর্ট থানার ওসি জানান, “মেয়েটির জবানবন্দি ও মেডিকেল পরীক্ষার ভিত্তিতে বুধবার বিকেলে অভিযুক্ত হালিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (OCC) চিকিৎসাধীন।”

আইন ও ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্ষণ

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে, ধর্ষণ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। শিশু ও কিশোরী ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রে অপরাধটি বিশেষভাবে সংবেদনশীল এবং রাষ্ট্র কর্তৃক কঠোর নজরদারির আওতায় থাকে।

ইসলামে ধর্ষণকে চরম অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আল কুরআনে বলা হয়েছে:

“তোমরা নির্লজ্জ কাজের ধারে কাছেও যেয়ো না—তা প্রকাশ্য হোক বা গোপন।”
(সূরা আন’আম: ১৫১)

“যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে, তাদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড, কিংবা শূলে চড়ানো…”
(সূরা আল-মায়িদা: ৩৩)

হাদীসে এসেছে,

“যে ব্যক্তি জোর করে কোনো নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, তার ওপর হুদুদ (শাস্তি) প্রয়োগ করতে হবে।”
(আবু দাউদ: ৪৩৭৯)

শেখবাড়ী মাদ্রাসা মৌলভীবাজার’র শিক্ষক মুফতি তোফায়েল খাঁন বলেন, “ইসলামে নারীর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য যেমন পর্দার বিধান রয়েছে, তেমনি পুরুষদের চরিত্র সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের নির্দেশও রয়েছে। সমাজে ধর্ষণ বন্ধ করতে হলে উভয়পক্ষের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা অপরিহার্য।”

আইনজীবী ও ইসলামি চিন্তাবিদ অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ মম বলেন, “শরীয়ত মোতাবেক, ধর্ষণ ‘হদ’ পর্যায়ের অপরাধ। আদালতে প্রমাণিত হলে এর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর—যা কেবল অপরাধীকে নয়, সমাজকে নিরাপদ রাখার জন্য জরুরি।”

সচেতনতা ও প্রতিরোধ: আমাদের করণীয়

এই ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে সামাজিক, ধর্মীয় ও পারিবারিক স্তরে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে:

  • পরিবারে সচেতনতা বাড়ানো: শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে খোলামেলা ও আত্মবিশ্বাসভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
  • নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা: প্রাথমিক স্তর থেকেই ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইসলামী আদর্শ ও সংযমের শিক্ষা দেওয়া।
  • আইনি সচেতনতা: স্কুল-কলেজে নারী ও শিশু সুরক্ষা বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচি গ্রহণ।
  • সমাজে প্রতিবাদ ও প্রতিবেদন: অপরাধ গোপন না করে আইনের আশ্রয় নেওয়া এবং অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা।

শেষ কথা

এটি শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি সমাজের একটি গভীর সমস্যা, যা প্রতিটি পরিবারের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ধর্ম, নৈতিকতা ও আইনের সম্মিলিত প্রয়োগের মাধ্যমেই এই অন্ধকার থেকে সমাজকে মুক্ত করা সম্ভব।

বিশেষ প্রতিবেদক : এস এম মেহেদী হাসান

সম্পাদনায় : মাহমুদুল/ তাবাসসুম/ সালেহ আহমদ